২৫০ বছরের ঐতিহ‍্য পরম্পরা মেনে পুজোর আয়োজন : প্রস্তুতি শুরু জমিদারবাড়িতে

8th September 2021 10:49 am বাঁকুড়া
২৫০ বছরের ঐতিহ‍্য পরম্পরা মেনে পুজোর আয়োজন : প্রস্তুতি শুরু জমিদারবাড়িতে


দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) :  নীল আকাশে শরতের মেঘ বলছে মা আসছে। বিপর্যয়ের এই সময়ে একটু আনন্দের খোরাক হয়ে আসছে দুর্গাপূজা। আর এই পূজা মানেই রংবেরঙের প্যান্ডেল ছাড়াও সবার আকর্ষণ থাকে শতাব্দী প্রাচীন বনেদি বাড়ির পুজোগুলির দিকেও। আজ আপনাদের নিয়ে যাবো বাঁকুড়া জেলার এমন এক শতাব্দী প্রাচীন পুজোর আঙিনায়, যার ইতিহাস জড়িত বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের সঙ্গে। আজ আমরা বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়র থানার হদল নারায়নপুরের জমিদার বাড়িতে আপনাদের সামনে আড়াইশো বছরের পুরনো এক পুজোর ইতিহাস নিয়ে। সালটা ছিল ১৭১২, বর্ধমান জেলার নীলপুর থেকে মুচিরাম ঘোষ নামে এক ব্যক্তি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ভাগ্য অন্বেষণে। রাজ্যের নানা প্রান্ত ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে তিনি ঠাঁই নিয়েছিলেন বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়র থানার হদল নারায়নপুরে এবং এখানকার মনোরম পরিবেশ এবং নদীমাতৃক গ্রাম দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে মনস্থির করেন এখানেই তিনি বসবাস করবেন। দীর্ঘদিন বসবাস করার পরে পাশের গ্রাম রামপুরের জগন্নাথ চৌধুরীর সাথে বন্ধুত্ব হয়, যিনি আর কেউ নয় মল্ল রাজাদের উপাধি দেওয়া গণিত আচার্য শুভঙ্কর রায়। তার সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর একদিন শুভঙ্কর রায় মুচিরাম ঘোষকে নিয়ে যায় বিষ্ণুপুরের তৎকালীন মল্ল রাজা গোপাল দেব সিংহ ঠাকুরের কাছে। রাজামশাই মুচিরামের কাজে সততা ও সাহসিকতা দেখে মুগ্ধ হন এবং তৎকালীন পাত্রসায়ের এর পারুলিয়া পরগনা নামক একটি  জমিদারির দায়িত্বভার তুলে দেওয়া হয় মুচিরাম ঘোষকে। তার পাশাপাশি মুচিরাম ঘোষকে মল্ল রাজা 'মন্ডল' উপাধিও দেন। তারপর থেকেই মন্ডল বাড়ির নামকরণ হয়। ঠিক তার কয়েক পুরুষ পর থেকেই এই জমিদার বাড়িতে সূচনা হয় দুর্গাপূজার। এই মণ্ডল পরিবারের সপ্তম পুরুষ জমিদার বেচারাম মন্ডলের আমল , তখন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য একদিন বেচারাম মন্ডল নদীপথে বাণিজ্য করে ফেরার পথে শ্রীরামপুরে কাছে ডাকাত দের কবলে পড়েন। সেই বছর বাণিজ্যে অনেক মুনাফা হয় বাধ্য হয়েই প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে ডাকাতদের কাছে নিজেদের আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু ছেড়ে দেওয়ার পাত্র ছিল না জমিদারবাবুর ২ লাঠিয়াল দামু ও কামু। ডাকাতদের সাথে প্রাণপণ লড়াই করে জমিদার বেচারাম মন্ডল কে উদ্ধার করে এই ২ লাঠিয়াল। যার কারণে আজও লাঠিয়াল দামু কামুর মূর্তি মন্ডল বাড়ির প্রবেশ দাড়ির দুদিকে দেখা মেলে।

এদিকে প্রাণ ফিরে পেয়ে বেচারা মন্ডল সে বছর দুর্গা পুজো করে আরো ধুমধাম করে। আর সেই পুরনো রীতি নীতি মেনে আজও জমিদার মন্ডল বাড়িতে হয়ে আসছে দুর্গাপুজো।

দুর্গাপুজো হতে এখনো হাতে রয়েছে বেশ কয়েকটা দিন। কিন্তু জমিদারবাড়ির পুত্রবধূর এই কটা দিনে ঘরে বসে থাকতে নারাজ। এখন থেকেই মায়ের সেবায় নিযুক্ত হয়ে পড়েছেন তারা। মায়ের ভোগের থালা থেকে মন্দিরের চাকচিক্য, সবদিকেই এখন থেকেই নজর দিয়েছে জমিদার বাড়ি। চলছে পুজোর প্রস্তুতি।





Others News

মল্লরাজ ভূমিতে তোপধ্বনিতে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ : পুজো ঘিরে উন্মাদনা

মল্লরাজ ভূমিতে তোপধ্বনিতে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ : পুজো ঘিরে উন্মাদনা


দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) : তোপধ্বনি তে কেঁপে উঠল বিষ্ণুপুর । শুরু হল মল্ল রাজাদের ১০২৫ বছরের অষ্টমী পূজোর সন্ধিক্ষণ।

প্রাচীণ ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে আজও নিষ্ঠাভরে বিষ্ণুপুর রাজ বাড়িতে দেবী দুর্গা 'মৃন্ময়ী নামে পূজিতা হন। জানা গিয়েছে, পূর্ব প্রথা মতোই প্রাচীণ রীতি মেনে মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষণে কামান দাগার মধ্য দিয়ে বিষ্ণুপুর রাজ বাড়িতে শুরু হয়ে গেল 'বড় ঠাকরুনে'র পুজো। তবে এবার করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দর্শক সাধারণের উপস্থিতি ছিল বাঁধভাঙ্গা। সরকারী নিয়মকে মান্যতা দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছে দেবী বন্দনা। এমনকি এখানে কামান দাগার পর্বেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে অল্প সংখ্যক লোককে নিয়ে ঐ কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে।

শুরুর সময় থেকে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ ঘোষণা করা হয় বড় কামানের গর্জনের শব্দে। যার আওয়াজে রাজবাড়িতে আরতি নৃত্যও শুরু হয়ে যায়।